ইসলামে সংক্রামক রোগ বলতে কি কিছু নেই? (পর্ব ২)
প্রথম পর্বের শুরুতে আলোচনার শিরোনামগুলো দেওয়া আছে
তাহলে জীবাণু, অণুজীব, ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের ক্ষেত্রে এর বিপরীত কথা কেন হবে?
জীবাণু (GERM) বা অণুজীব (MICROBE)-এর বিস্তারিত বিবরণ না দিয়ে আমরা এক কথায় বলব, এগুলো আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্ট এমন সব ক্ষুদ্রাকায় জীব; যা অণুবিক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। ভাইরাস (Virus), ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) ইত্যাদি অণুজীবেরই অংশ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে
বোঝার সুবিধার্থে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্ষিপ্ত পরিচয় লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব
করছি।
ভাইরাস (Virus)ঃ জীববিজ্ঞানের মতে “ভাইরাস
হলো নিউক্লিক অ্যাসিড (কেন্দ্রীয় অংশ) ও প্রোটিন (আবরণ) দিয়ে গঠিত অকোষীয়, অতি-আণুবীক্ষণিক সত্তা, বাধ্যতামূলক পরজীবী যা জীবদেহের অভ্যন্তরে সক্রিয় হয়ে রোগ সৃষ্টি করে কিন্তু
জীবদেহের বাইরে নিষ্ক্রীয় অবস্থায় বিরাজ করে তাকে ভাইরাস বলে।” [1]
ভাইরাস এর প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য হলো,
জড়-রাসায়নিক
বৈশিষ্ট্য ও জীবীয় বৈশিষ্ট্য।
জড়-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি হলো,
ভাইরাস
জীবকোষের সাহায্য ছাড়া স্বাধীনভাবে প্রজননক্ষম নয়। আর জীবীয় বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে
দুটি বৈশিষ্ট্য হলো,
১) পোষক কোষের অভ্যন্তরে ভাইরাস সংখ্যাবৃদ্ধি (multiplication) করতে পারে।
২) নতুন সৃষ্ট ভাইরাসে মাতৃভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে, অর্থাৎ একটি ভাইরাস তার অনুরূপ ভাইরাসের জন্ম দিতে পারে।
ব্যাকটেরিয়া (Bacteria)ঃ ব্যাকটেরিয়া হলো
জড় কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট এককোষী, আণুবীক্ষণিক আদিকেন্দ্রিক
অণুজীব যা সাধারণত ক্লোরোফিলবিহীন এবং প্রধানত দ্বিভাজন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে।[2]
সুধী পাঠক, জীববিজ্ঞানের উক্ত কথার সাথে কি ইসলামের কোনো সংঘর্ষ আছে?
ভাইরাস “অণুজীব” নাকি “অতি-আণুবীক্ষণিক সত্তা” সে বিতর্কে আমরা যাব না। কিন্তু
উল্লেখিত সংজ্ঞায় আশ্চর্যজনকভাবে প্রমাণিত যে, এগুলো পরজীবী অকোষীয় এবং শুধুমাত্র জীবদেহের অভ্যন্তরেই বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
নতুন ভাইরাসে মাতৃভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে, অর্থাৎ একটি ভাইরাস তার অনুরূপ আরেকটি ভাইরাসের জন্ম দিতে পারে। আর
ব্যাকটেরিয়ার বিষয়তো আরো স্পষ্ট। এর সাথে ইসলামের কোনো সংঘর্ষ নেই। আর এটা একমাত্র
আল্লাহ্পাকের হুকুমেই হতে পারে, অন্য কোনোভাবে হতে
পারে না।
আমরা বর্তমান “করোনা” ভাইরাসের কথাই ধরি,
তারা
জীবিত কোষের বাইরে বেশীক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে না বলে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দাবি।
জীবিত কোষের মধ্যে “অতি-আণুবীক্ষণিক সত্তার” বেঁচে থাকা বা বংশবৃদ্ধি করার কথা
দ্বারা আমরা আল্লাহ্ তায়ালার মহিমা ও কুদরতের পরিচয়-ই পাচ্ছি। এগুলো তিনি ছাড়া
অন্য কারোর দ্বারা সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত: এধরনের অণুজীবগুলিকে আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টি করে এমনিতেই ছেড়ে দেননি
বরং প্রত্যেক শ্রেণীকে আলাদা আলাদা গঠন,
দায়িত্ব, বৈশিষ্ট্য ও কর্মক্ষমতা দিয়েছেন এবং তাদের রিযিক ও বয়সসীমা
নির্ধারণ করে দিয়েছেন।[1]
প্রশ্ন হলো, আগুন ‘পোড়ার’ কারণ, বিষ ‘মৃত্যুর’ কারণ,
নারী-পুরুষের
মিলন ‘সন্তান আসার’ কারণ ইত্যাদি প্রত্যেকটার ক্ষেত্রে আমরা যদি আল্লাহ্ প্রদত্ত
স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে স্বীকার করি তাহলে ‘ভাইরাস’, ‘ব্যাকটেরিয়া’ তথা অণুজীবের ক্ষেত্রে আমরা আল্লাহ্ প্রদত্ত স্বাভাবিক
প্রক্রিয়াকে স্বীকার করবনা কেন? অথচ এগুলোও আল্লাহ্
তায়ালার সৃষ্টি এবং সেগুলো সব তাঁরই হুকুম পালন করে।
আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে সাধারণ প্রক্রিয়ায় অণুজীবগুলি তাদের কাজ ঠিকমত চালিয়ে
যাবে, যতক্ষণ না আল্লাহ্ তায়ালা
বিপরীত কিছু চান। অতএব তিনি যদি কোনো ভাইরাসকে সংক্রামক করে পাঠিয়ে থাকেন তবে সে
স্বাভাবিক গতিতে সংক্রমিত হতেই থাকবে যদি না আল্লাহ্ তায়ালা এর বিপরীত চান। তবে
আগুন যেমন পোড়ার অবশ্যম্ভাবী কারণ, ভাইরাস রোগ সৃষ্টির
অবশ্যম্ভাবী কারণ নয়।
বাকী ইসলামের দৃষ্টিতে রোগ সংক্রামক হয় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা সামনে করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিজ্ঞানের আবিস্কার
বিজ্ঞান অবশ্য অনেক সময় পরস্পর বিরোধী মতামত প্রকাশ করে থাকে। আজ এক মত তো কাল
আরেক কথা প্রকাশ করে। বিশেষ করে মেডিক্যাল সায়েন্স থেকে এক এক সময় এক এক কথা বলা
হয়। যেটাই হোকনা কেনো, তাদের মতামত কুরআন
হাদীসের সাথে যদি সরাসরি সাংঘর্ষিক না হয় তাহলে তা ইসলামে গ্রহণযোগ্য। বিজ্ঞানের
উৎকর্ষতা ইসলামের সাথে টক্কর দেওয়ার জন্য নয়। বরং বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা যতই বাড়ছে, ইসলামের সত্যতা তত বেশী প্রকাশিত হচ্ছে। আর যারা ইসলামের
সাথে সাংঘর্ষিক কোনো মতামত পেশ করেছে তারা বাস্তবে সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। যেমন
বিবর্তনবাদের ধারণা। শত শত বৎসর ধরে এ ধারণা চলে আসলেও এর কোনো বাস্তবতা
বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হয় নি, চোখের দৃষ্টিতেও এরূপ
ঘটনা ঘটে নি। পক্ষান্তরে অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালার পরিচয়
পেতে আরো সহজ করে দিয়েছে আলহামদু লিল্লাহ এবং অনেক অজানা বিষয় সামনে এনেছে।
রক্ত সম্পর্কে মানুষ জানত, দেখত। কিন্তু রক্তের গ্রুপ
সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা ছিলো না। রক্ত লাল হয় কেন; তা মানুষের জানা ছিলো না। রক্তরস (plasma)ও রক্তকণিকা (blood corpuscles) এর মধ্যেও যে অগণিত উপাদান রয়েছে এগুলো সবই জীববিজ্ঞানের
গবেষণার ফল।[2] আমরা
এগুলোর বাস্তবতা মানি এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর মহিমা সম্পর্কে কল্পনা করি।
বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু পানির মধ্যে যে আল্লাহ্ তায়ালা কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ দ্রবণীয় করে রেখেছেন, তা মানুষের জানা ছিলো না। আমরা এগুলো বিজ্ঞানের গবেষণায়
জানতে পেরেছি। শাক-শব্জি, ফল-মূল, গম, চাউল, ডাল ইত্যাদি খেয়ে মানুষ জীবন ধারণ করে। কিন্তু এর মধ্যে
চোখের অদৃশ্যে যেসব উপাদান রয়েছে, মানুষ সেগুলো বিজ্ঞানের
গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হলো, এসব উপাদানের এক একটির বৈশিষ্ট্য ও ক্রিয়া এক এক ধরনের।
গবেষকরা নিজেরা যেহেতু এগুলো সৃষ্টি করতে পারেন না, সেহেতু প্রশ্ন এসে যায়, এসব গুরুত্বপূর্ণ
জিনিসের স্রষ্টা কে?
ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার ব্যাপারটিও ঠিক
তদ্রুপ
জীববিজ্ঞানের গবেষণার ফলেই আমরা অণুজীব তথা ভাইরাস ও ব্যাটেরিয়া সম্পর্কে
জানতে পেরেছি। আশ্চর্যের বিষয় হলো এক একটা ভাইরাসের এক এক রকম বৈশিষ্ট্য। আদিকাল
থেকেই মানুষ রোগব্যাধি দেখেছে, নিজেরা আক্রান্ত
হয়েছে। যুগ যুগ ধরে একজন হতে আরেকজনের রোগ হতে দেখেছে। ইতিহাস সাক্ষী, কোনো কোনো অঞ্চলে একটা রোগ হয়ে মহামারী আকার ধারণ করেছে এবং
সেসব অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছে। কিন্তু এর কারণ সম্পর্কে
মানুষ জানত না। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সম্পর্কে মানুষের কোনো ধারণা ছিলোনা। মূলত
এসব রোগের পিছনে প্রধানত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসই কাজ করে।
প্রশ্ন হলো, ভাইরাসের স্রষ্টা কে?
এর উত্তরে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলতে পারেন। কেউ বলবেন এমনিতেই হয়, কেউ বলবেন প্রাকৃতিক,
জীববিজ্ঞানীরা
বিভিন্ন থিওরী পেশ করতে পারেন। কেউ আবার ভাইরাসকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারেন, একভাগ প্রাকৃতিক তথা আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক সৃষ্ট, আরেকভাগ বিজ্ঞান কর্তৃক সৃষ্ট। প্রথমত: আমরা বলব, ভাইরাসসহ সব কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা, যেভাবেই সৃষ্টি হোকনা
কেন। যে ভাইরাসকে বিজ্ঞান কর্তৃক সৃষ্ট বলা হচ্ছে সেটাও মূলত: আল্লাহ্ তায়ালা
কর্তৃকই সৃষ্ট। কারণ, একটু গভীরভাবে চিন্তা
করলে আমরা বুঝতে পারব, ভাইরাসের জড়-রাসায়নিক
ও জীবীয় বৈশিষ্ট্য উভয়টিই বিদ্যমান। এটা জীবকোষে স্বাধীনভাবে প্রজননক্ষম। আমরা
আগেই আলোচনা করেছি, ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি
হয় এবং নতুন ভাইরাসে মাতৃভাইরাসের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। জীবীয় বৈশিষ্ট্যই প্রমাণ
করে যে তার মধ্যে প্রাণ আছে। অথচ প্রাণ সৃষ্টি করার ক্ষমতা বা কোনো জিনিসের মধ্যে
প্রাণ সঞ্চালনের যোগ্যতা বিজ্ঞানের নেই। বিজ্ঞান যে রাসয়নিক পদার্থ তৈরী করে তার
মধ্যে প্রাণ বা জীবীয় বৈশিষ্ট্য থাকে না।
দ্বিতীয়ত: গবেষণার জন্য বিজ্ঞান আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টির প্রতি মুখাপেক্ষী।
বিজ্ঞানীরা মাধ্যম ছাড়া সামনে এগুতে পারেননা। আল্লাহ্ তায়ালা কর্তৃক সৃষ্ট জীব, অণুজীব বা বিভিন্ন বস্তু বা পদার্থের উপরে বিজ্ঞান গবেষণা
করে তাকে আধুনিকায়ন করতে পারে। বিজ্ঞান নতুনভাবে কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না।
বিজ্ঞান কেবল পৃথিবীতে আগে থেকে বিদ্যমান কোনো বস্তু বা বিষয় যা মানুষের অজ্ঞাত
ছিলো তা আবিষ্কার করে সে সম্পর্কে মানুষকে জানার বা ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।
উদাহরণস্বরূপ আমরা বিদ্যুতের আবিষ্কারের কথা ধরি। বিদ্যুতের অস্তিত্ব পৃথিবী
সৃষ্টির শুরু থেকেই মেঘের মধ্যে সুপ্তাবস্থায় বিদ্যমান ছিলো। মেঘের মধ্যে
বিদ্যুতের চমকই ছিলো তার বহি:প্রকাশ। আর এটাকেই আল্লাহ্ প্রদত্ত বুদ্ধি ও গবেষণার
দ্বারা বিজ্ঞান সহজ উপায়ে তৈরী ও ব্যবহার পদ্ধতির আবিষ্কার করেছে। অতএব বিদ্যুতের স্রষ্টাও আল্লাহ তায়ালা,
বজ্ঞিান
নয়। বিজ্ঞানের ভাষায় সৃষ্টিকে আবিষ্কার অর্থে ব্যবহার করা হয়। আল্লাহ্ প্রদত্ত মাধ্যম
ছাড়া নতুনভাবে বিজ্ঞান কিছুই সৃষ্টি করতে পারেনা।
আর জীব বা জীবন সৃষ্টি করার ক্ষমতাতো বিজ্ঞানের কোনোভাবেই নেই। আমরা পোল্ট্রি
মুরগির উদাহরণ সামনে আনতে পারি। পোল্ট্রি মুরগি বিজ্ঞানের নতুন সৃষ্ট নয়। পৃথিবীতে
আগে থেকে বিদ্যমান মুরগির মধ্যে জিন প্রকৌশল (Genetic-engineering) প্রয়োগ করে নতুন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন (GMO)[3] মুরগির জাত (variant) আবিষ্কার করেছে যাতে দ্রুত
বর্ধনশীল ও অধিক গোস্ত পাওয়া যাচ্ছে। মূলত: এর ¯্রষ্টা আল্লাহ্
তায়ালা। বিজ্ঞান যদি নতুন করে আসলেই সৃষ্টি করতে পারত তবে প্রাণীজগতে ক্রসিং বা
ক্লোনিং পদ্ধতি অবলম্বন করার কথা আসতনা। আসলেই জীব ও জীবন সৃষ্টি করার ক্ষমতা
বিজ্ঞানের নেই।
একইভাবে ভাইরাসও সৃষ্টি করা বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভব নয়। বিজ্ঞান কেবল পূর্ব
থেকে বিদ্যমান কোনো ভাইরাসের জিনে পরিব্যক্তি ঘটিয়ে নতুন প্রজাতির ভাইরাস তৈরী
করতে পারে। করোনা বা কোভিড-১৯ সম্পর্কে মানুষ কর্তৃক সৃষ্টির যে গুজব উঠেছে, তা যদি সঠিকও হয়,
তাতে
আশ্চর্যের কিছু নেই। কারণ, হতে পারে এটা অন্য
কোনো ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তনে সৃষ্ট নতুন প্রজাতির ভাইরাসের নাম ‘কোভিড-১৯’।
প্রকৃত পক্ষে কোভিড-১৯ এর স্রষ্টা বিজ্ঞান নয়।
মূল কথা হলো, ভাইরাস আল্লাহ
তায়ালার সৃষ্ট। আর বিজ্ঞানের এসব গবেষণায় আমরা আল্লাহ্ তায়ালার অস্তিত্বকেই খুঁজে
পাই। আর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণা করা আল্লাহরই নির্দেশ।[4]
ভাইরাস কি সংক্রমিত হয়? এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে?
জীববিজ্ঞানের গবেষণা মতে বিভিন্ন প্রকারের অণুজীব সংক্রামক হতে পারে। তাদের
মতে অণুজীবের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে এটাও রয়েছে যে, তা ২ প্রকার।
১। সংক্রামক (COMMUNICABLE
DISEASES)।
২। অসংক্রামক (NON
COMMUNICABLE DISEASES)।
জীববিজ্ঞানে ‘সংক্রামক রোগ’ এর যে ধারণা দেওয়া হয়েছে তাতে কিছুটা অস্পষ্টতা
রয়েছে। কারণ, যেসব অণুজীবের ব্যপারে
সংক্রামক (COMMUNICABLE DISEASES) হওয়ার কথা বলা হয়
তা যদি সর্বক্ষেত্রে ১০০% সঠিক হয় তাহলে প্রশ্ন থেকে যাবে। আর তা হলো, এটা প্রমাণিত যে,
একই
স্থান থেকে একই সময়ে একজনের দেহে সংক্রমণ হয়,
আরেকজনের
দেহে কেনো হয়না- এর কারণ কি? এজন্য সংক্রামক রোগের
দাবি ১০০% সঠিক নয়।
অবশ্য এটা ধারণা করা হয় যে, সংক্রামক ভাইরাস
সংক্রমিত হবেই। তবে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিক মাত্রায় থাকলে সংক্রমিত ভাইরাস
কিছু করতে পারে না। আমাদের মনে হয় এর মধ্যেও কিছুটা অস্পষ্টতা রয়েছে। কারণ, কারোর দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী আর কারো দেহে কম থাকার
পিছনে রহস্য কি?
একারণে ইসলাম ১৪০০ বছর পূর্বে উল্লেখিত সংক্রামক রোগের (COMMUNICABLE DISEASES)-এর বিষয়ে অতি সুস্পষ্ট ধারণা ও ব্যাখ্যা দিয়েছে।
সংক্রামক রোগের বিষয়ে ইসলামের
সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা
কুরআন হাদীস ও আইম্মায়ে কেরামের বক্তব্য ও তাঁদের কর্মপন্থার আলোকে ইসলামে
সংক্রামক রোগের (COMMUNICABLE
DISEASES)-এর বিষয়টি নিম্নরূপ:
আল্লাহ্ তায়ালা কিছু রোগকে (অণুজীবকে) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে
স্থানান্তরিত হওয়ার বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে এ ধরনের
রোগ বাঅণুজীব স্থানান্তরিত হতে পারে। এটা এভাবে যে, প্রথমে একজনের দেহে কোনো মাধ্যম ছাড়াই তা প্রবেশ করে। অতপর আল্লাহর ইচ্ছায়
প্রথমজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে তার প্রবেশ ঘটে। অতপর তিনি চাইলে দ্বিতীয়জনের
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ক্ষতিকর অণুজীব তথা রোগের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেন। তখন
ক্ষতিকর অণুজীব তার শরীরে বংশবৃদ্ধি করে সক্রিয় হতে থাকে এবং তার অসুস্থতা বাড়তে
থাকে।
প্রথম ব্যক্তি অসুস্থ হলো কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে। আর
দ্বিতীয় ব্যক্তি অসুস্থ হলো প্রথম ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে আল্লাহ্ তায়ালারই
হুকুমে। এভাবে তাঁর হুকুমে একাধিক বা অগণিত ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। এই
সংস্পর্শকে দ্বিতীয় ব্যক্তির রোগ সৃষ্টি হওয়ার “কারণ” বলা হয়। ইসলামী পরিভায়ায় এ
কারণকে “ছাবাব” বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সংক্রামক ভাইরাস স্থানান্তরিত হয় যেমন
আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে, অনুরূপভাবে
বংশবিস্তারের ক্ষমতাও পাচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও
কম-বেশী হচ্ছে আল্লাহ্ তায়ালার হুকমে। এ কারণে দেখা যায়, অনেক সময় (সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্থ) রোগীর সংস্পর্শে আসা
সত্বেও (আল্লাহ তায়ালার হুকুম না হওয়ায়) অপরজন অসুস্থ হচ্ছে না বা তার মাঝে রোগ
সংক্রমিত হচ্ছে না।
কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও এরূপ অনেক উদাহরণ রয়েছে। একজন আক্রান্ত হচ্ছে, আরেকজন হচ্ছে না।
তবে রোগ বা ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে কিনা এ বিষয়ের দলীল-আদিল্লাসহ
বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও আল্লাহ্ প্রদত্ত তা আমরা উপরের আলোচনায় কিছুটা বুঝতে পেরেছি।
রোগ প্রতিরোধের জন্য আল্লাহ্ তায়ালা দেহের
ভিতরে ও বাইরে যে কত রকম ইমিউনিটি (immunity) (অনাক্রম্যতা) রেখেছেন তা ভাবলে অবাক হতে হয়। দেহের
অভ্যন্তরে অ্যান্টিবডি তৈরী হওয়ার বিষয়টাও আল্লাহ্ তায়ালার ইচ্ছাধীন।
ইমিউনতন্ত্রের বাড়তি শক্তি যোগাতে ভ্যাক্সিনের প্রয়োগ এখন সারা পৃথিবীতে সমাদৃত।
কিন্তু আল্লাহ্ তায়ালা ইচ্ছা করলে ঔষধ গ্রহণ বা ভ্যাক্সিন ছাড়াই শরীরের
অ্যান্টিবডি বাড়িয়ে দিতে পারেন, ফলে শরীরে প্রবিষ্ট
ক্ষতিকর অণুজীব বা ভাইরাস অ্যান্টিবডির আক্রমণে মৃত্যু বরণ করতে পারে। কিন্তু
আল্লাহ্ তায়ালা মানবজাতির সামনে একটা সহজ ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া দিয়ে দিয়েছেন। আর
তা হলো, ঔষধ, ভ্যাক্সিন ইত্যাদি গ্রহণ। বিভিন্ন ঔষধের মধ্যে মধু ও
কালোজিরার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।[5]
ঔষধ গ্রহণ করা সুস্থ থাকার জন্য কারণ (ছাবাব)। আল্লাহ্ তায়ালা যখন চান, তখন ঔষধ ক্রিয়াশীল হয়। আবার তিনি যদি না চান, তখন ঔষধ তার ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে রোগীর অবস্থা
সংকটাপন্ন হয়। এ কথাগুলো আজ দিবালোকের ন্যায় সত্য।
ঔষধ একজনের শরীরে কাজ করছে, আরেকজনের শরীরে কাজ করছে না এটা আমরা সর্বদা দেখতে
পাচ্ছি। ক্ষতিকর ভাইরাস ও এন্টিভাইরাস উভয়টিই বিপরীতমুখী দুই জিনিসের দুটি কারণ
(ছাবাব)। একটি অসুস্থতার কারণ, আরেকটি সুস্থতার
কারণ। উভয়টিই ক্রিয়াশীল হয় মূলত: আল্লাহর হুকুমে এবং রোগ সংক্রামকও হতে পারে
আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে।
তাহলে হাদীসে “সংক্রমণ নেই” কেনো বলা
হলো?
কারণ, এক. আরবের জাহেলী যুগের কাফির
মুশরিকরা রোগ সৃষ্টি ও সংক্রমণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমের বিষয়টা
একেবারেই বিশ্বাস করতো না। তারা মানতো না যে,
রোগ
মূলত: আল্লাহ্তায়ালার হুকুমে হয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস ছিলো যে, রোগ নিজে নিজে আসে এবং নিজের ক্ষমতায় একজনের দেহ থেকে
অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে।
দুই. বর্তমান সময়েও এরূপ বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। বিশ্বে
মেডিক্যাল সায়েন্স-এ এমন অনেক ডক্টর আছেন যারা সংক্রমণকে অবশ্যম্ভাবী মনে করেন।
ফলে কোনো সময় এরূপ বিশ্বাসীদের দ্বারা অনেক বাড়াবাড়িও লক্ষ্য করা যায়। যেমন
প্রচণ্ড সন্দেহপ্রবণ হওয়া, স্বাভাবিক সময়েও ভাইরাসের সন্দেহে রোগীর কাছেই না যাওয়া, ভয়ে রোগীর সেবাদান থেকে দূরে থাকা, এ ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত করা, স্বাভাবিক সময়ে বাইরে থেকে আসা অতিথির শরীরে ভাইরাস লেগে আছে মনে কারা
ইত্যাদি। (বর্তমান কোভিট-১৯ এর সময় এতদূরও শোনা গিয়েছে যে, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহ হওয়া মাত্রই তাকে আগুনে
পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো দেশেতো করোনা সন্দেহে রোগীকে মরুভূমিতে নিয়ে যেয়ে
গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। এ ধরনের বাড়াবাড়ি ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। করোনার মত
প্রাণঘাতি সংক্রামক ভাইরাস নিশ্চিত হওয়ার পরেও যেখানে সেবা দেওয়া ও সুস্থ করে
তোলার চেষ্টা করা জরুরী সেখানে উক্ত কর্মকান্ড কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এগুলো বাড়াবাড়ি। উক্ত বাড়াবাড়ির ফলাফলটা এতদূরে নেমেছে যে, করোনায় মৃত্যুবরণকারীর গোসল, কাফন-দাফন ও জানাযা থেকে মানুষ পলাচ্ছে। এমনকি গোরস্থানে দাফন করার উপরেও
এলাকার মানুষের বাধাদানের খবর প্রকাশ হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড শরীয়ত বিরোধী ও অমানবিক।)
উক্ত ভ্রান্ত বিশ্বাস খন্ডন করতেই রাসূলে কারীম স. ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, “(লা-আদওয়া) রোগের সংক্রমণ নেই” অর্থাৎ “রোগের নিজস্ব সংক্রমণ
ক্ষমতা নেই”। বরং এর পিছনে রয়েছে আল্লাহ্ তায়ালার হুকুম।
“ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে
কিছু নেই”- উক্ত হাদীসের এরূপ অর্থ করা বিশুদ্ধ নয়। কেননা এরূপ অর্থ করলে কেমন যেন
ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হয়। অথচ ইসলাম এগুলোর অস্তিত্বকে
অস্বীকার করে না। অনুরূপভাবে ভাইরাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া রোগ
সৃষ্টির কারণও ইসলাম অস্বীকার করে না। তবে রোগ সৃষ্টি হওয়ার মূল হুকুমদাতা আল্লাহ্
তায়ালা। নিম্নে হাদীস শরীফ থেকে কিছু
উদাহরণ পেশ করা হলো।
রোগ-জীবাণু ও সংক্রামক রোগ বিষয়ে
হাদীসসমূহ
১, মাছির ডানা সংক্রান্ত হাদীস
১। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“তোমাদের কারো খাবার পাত্রে
মাছি পড়ে গেলে তাকে তোমরা সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দিবে, অতপর ফেলে দিবে। কেননা তার এক ডানায় রয়েছে শিফা, ও অপর ডানায় রয়েছে জীবাণু”।(বুখারী শরীফ- হা: নং ৩৩২০)
২। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন, “....মাছি বাঁচার জন্য তার বিষাক্ত ডানাটিই আগে প্রবেশ
করিয়ে থাকে, তাই তার পুরাটাই ডুবিয়ে
দাও।”(নাসাঈ শরীফ- হা: নং ৩৮৪৪)
উক্ত হাদীস হতে রোগ-জীবাণু ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং সে
জীবাণু যে খাবারের সাথে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে (সংক্রামক হতে পারে) তারও
প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন হতে পারে, উক্ত হাদীস দ্বারা
মাছির ডানা থেকে খাবারের মাধ্যমে মানব দেহে রোগের প্রবেশ করার কথা বোঝা যায়, এটাতো সংক্রামক রোগ নয়।
আমরা বলব, এটা অজ্ঞতাসূলভ প্রশ্ন। মাছির
ডানা থেকে খাবারের মাধ্যমে একজনের শরীরে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করার পরে তার দেহ থেকে
ঐ জীবাণু বিভিন্ন উপায়ে আরেক জনের দেহে প্রবেশ করতে পারে। যেমন একটা মাছি তার
শরীরে বসে মুখ লাগালো, ফলে তার মুখে
জীবাণুটা লাগলা। সে এবার (ডানায় নয়) মুখে করে সে জীবাণুটা নিয়ে আরেক জনের দেহে বসল
অথবা মশার মাধ্যমে এটা ঘটল এবং জীবাণুটা অন্যের দেহে গেল। এমতাবস্থায় এটাকে
সংক্রামক রোগ ছাড়া অন্য কিছু বলা যাবে কি?
এটাকে
যদি সংক্রামক রোগ বলা যায়, তাহলে প্রথমবার মাছির
ডানা থেকে খাবারের মাধ্যমে মানব দেহে প্রবেশ করাকেও সংক্রামক রোগ বলতে হবে। আর
খাবারের মাধ্যমে মানব দেহে জীবাণু প্রবেশ করার (সংক্রামক রোগ হওয়ার) অংশটুকু হাদীস
দ্বারা প্রমাণিত। তবে সবই আল্লাহ্ তায়ালার ইচ্ছায় হয়।
২, কুকুরের লালা সংক্রান্ত হাদীস
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“কুকুর কোনো পাত্রে মুখ দিয়ে
খেলে অথবা পান করলে এটা পবিত্র করার জন্য সাতবার ধৌত করবে, প্রথমবার মাটি দ্বারা।”(মুসলিম শরীফ হা: নং-৪২০)
নাসাঈ শরীফের বর্ণনায় রয়েছে “অষ্টমবারে মাটি দিয়ে ঘষে পরিস্কার করবে”।
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. লেখেন, “মূলত: কুকুরের লালার আর্দ্রতার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী ও বিষাক্ত। থালাবাসন এবং খাদ্য ও
পানীয় সকল ক্ষেত্রেই এর ক্রিয়া সমভাবে ক্রিয়াশীল। যে ব্যক্তি কুকুরের খাওয়া কোনো
বস্তু খাবে অথবা কুকুরের মুখ দেয়া কোনো পাত্রে আহার করবে বা পানীয় পান করবে, তার মধ্যে কুকুরের হিংস্রতা ও হীন চরিত্রের প্রভাব অবশ্যই
প্রবেশ করবে। (যুক্তির কষ্টিপাথরে-৫৭)
প্রশ্ন হলো, কুকুরের লালার মাধ্যমে
মানব দেহে কি প্রবেশ করে? এবং তা কিভাবে প্রবেশ
করে? আমরা এ হাদীস থেকে কি কুকুরের
লালার মাধ্যমে শরীরে বিষাক্ত কিছু প্রবেশের প্রমাণ পাই না? বিজ্ঞানের ভাষায় বিষাক্ত সে জিনিসটার নাম কি? উক্ত হাদীস থেকে কুকুরের লালার বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া
সংক্রামক হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় কিনা?
কুকুররে লালা থকে জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে। র্যাবসি নামক ভাইরাস থকে জলাতঙ্ক রোগ
হয়ে থাকে। এটি একটি স্নায়ূজনতি রোগ। র্যাবসি নামক ভাইরাস কুকুররে লালা থেকে
ক্ষতস্থান/মুখে গেলে সেখান থেকে স্নায়ূপৌঁছে এ রোগ সৃষ্টি হতে পা্রে। জলাতঙ্ক হলে
স্নায়ূতে সমস্যা হয়ে থাকে। যার কারণে মস্তষ্কিরে প্রদাহরে সাথে খাদ্যনালীতে তীব্র
সংকোচন হতে পারে।
ডা. কুখ লিখেছেন, “যখন হতে আমি কুকুরের
কামড়ের রোগীর জন্য ‘নওশাদর’ (সাদা রঙের এক প্রকার খনিজ লবণ বিশেষ) জলাতঙ্ক রোগের
অব্যর্থ প্রতিষেধক রূপে অবগত হয়েছি, তখন হতে আমি এ মহান
নবী (মুহাম্মাদ স.)-এর প্রতি বিশেষভাবে ভক্তি ও শ্রদ্ধা পোষণ করি। এই ঔষধ
আবিস্কারের পথ উম্মুক্ত করতে তাঁর পবিত্রবাণীর আলোকচ্ছটাই আমাকে আলোর সন্ধান
দিয়েছে।” (যুক্তির কষ্টিপাথরে-৩৩৩)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর মুখনিঃসৃত উক্ত বাণী হতে তিনটি জিনিস
সম্পর্কে জানা যায়।
এক. ক্ষতিকর বিষাক্ত জীবাণু।
দুই. প্রতিষেধক।
তিন. রোগ সংক্রামক হওয়ার ইংঙ্গিত।
৩, পানির পাত্রে শ্বাস না ফেলা সংক্রান্ত হাদীস
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“তোমাদের কেউ পানি পান করার
সময় পাত্রে নিশ্বাস ত্যাগ করবে না, নিশ্বাস ফেলতে হলে
পাত্র হতে মুখ সরিয়ে নেবে। এরপর ইচ্ছা হলে আবার পান করবে।”(বুখারী শরীফ, হা: নং-১৫৩)
নাক ও ফুসফুসের কাজ কি?
আমরা জানি, নাক হল শ্বাসতন্ত্ররে প্রথম অংশ। এর বহুবধি কাজরে মধ্যে
গুরুত্বর্পূণ হল, এটি শ্বাসপ্রশ্বাসরে
সময় ঘ্রাণের সংবেদী উপলব্ধিকে জাগ্রত করে। ফুসফুসের প্রধান কাজ হলো, স্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেনকে রক্তপ্রবাহে
নেওয়া এবং রক্তপ্রবাহ হতে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে বাতাসে নিষ্কাশন করা।[6] আল্লাহ তায়ালার কি অপরূপ মহমিা, তিনি নাসারন্ধ্ররে ভতির দিকে এবং শ্বসনতন্ত্রের অন্ত:প্রাচীরে
অবস্থিত সিলিয়াযুক্ত (অসংখ্য লোমরে মাধ্যমে) কোষের ফাঁকে ফাঁকে আঠাল মিউকাস (রস)
ক্ষরণকারী কোষ দ্বারা এক চুম্বকীয় শক্তি সৃষ্টি করে রখেছেনে যা, শ্বাসপ্রশ্বাসরে সময় বাতাসরে সাথে আসা অবাঞ্ছতি ধূলকিণা, ধোঁয়া, জীবাণু এবং মানবদহেরে
জন্য যা ক্ষতিকর তাদরেকে বাধাপ্রদান করে নজিরে দিকে আর্কষণ করে টেনে নেয় এবং শ্বাস
ছাড়ার সময় সগেুলোকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে বরে করে দয়ে।
বিশেষ করে আমরা যখন হাঁচি দেই. তখন নাকের মধ্যে জমে থাকা এরূপ অগণিত জীবাণু এক
ধাক্কায় বের হয়ে আসে। কষ্টদায়ক বা ক্ষতিকর কোনো কিছু দেহ থেকে বের হয়ে গেলে যেহেতু
আল্লাহ্ তায়ালার প্রশংসা করা উচিৎ, একারণে রাসূলে কারীম
স. হাঁচি দেওয়ার পরে “আলহামদু লিল্লাহ” বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। অনুরূপ
প্রস্রাব-পায়খানা শেষে বাথরুম থেকে বের হওয়ার পরে “আলহামদু লিল্লাহ” বলার নির্দেশ
রয়েছে।
তাহলে শ্বাস ফেলার সময় নাসারন্ধের ভিতরে জমে থাকা কণা ও জীবাণু বের হয়ে আসে যা
চোখে দেখা যায় না। তাই রাসূলে কারীম স. পানিতে শ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। খাওয়ার
পানিতে যদি শ্বাস ফেলা হয় তবে উল্লেখিত ক্ষতিকর জীবাণু পানির সাথে মিশে তা আমাদের
শরীরে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। সে পাত্রের পানি অন্য কেউ পান করলে তারও
হতে পারে। এর দ্বারা কি আমরা অদৃশ্যের ক্ষতিকর জীবাণু ও ভাইরাসের অস্তিত্বের
ইঙ্গিত পাই না? পানি থেকে পুনরায় শরীরে
প্রবেশ যেন না করে এ জন্য পানিতে শ্বাস ফেলতে নিষেধের দ্বারা কি আমরা রোগের
সংক্রমণের ইঙ্গিত পাই না?
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
অসাল্লাম কি এগুলো দেখতে পেতেন?
এক. দেখা জরুরী নয়। কারণ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম নিজের
পক্ষ থেকে কিছু বলতেন না। আল্লাহ্ তায়ালার ইশারায় তিনি বলতেন এবং আল্লাহ্ তায়ালা
তাঁকে জানিয়ে দিলে তিনি জানতেও পারতেন।
দুই. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কর্তৃক এগুলো দেখাও সম্ভব।
এরূপ ঘটনাকে মুজেযা বলা হয়।
হযরত আবু জর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন. রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
অসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
“আমি এমন কিছু জিনিস দেখতে
পারি যা তোমরা দেখতে পারনা এবং আমি এমন কিছু জিনিস শুনতে পারি যা তোমরা শুনতে পার
না।”(তিরমিযী, হা: নং২৪৮২)
খায়বারের জনৈক ইয়াহুদী মহিলা একটি বকরীর গোস্তে বিষ মিশিয়ে রাসূলে কারীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে হাদিয়া পেশ করল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
অসাল্লাম বকরীর বিষ মিশ্রিত রান নিয়ে খেতে আরম্ভ করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামের কেউ
কেউ সে বকরীর গোস্ত খেতে শুরু করলেন। এমন সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম
বললেন, “তেমারা হাত উঠাও (খাওয়া বন্ধ
কর)।” অতপর তিনি ইয়াহুদী মহিলাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,“তুমি কি এ বকরীর গোস্তের সাথে বিষ মিশিয়েছ?” মহিলা বলল, কে বলেছে আপনাকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বকরীর রান ধরে বললেন, আমার হাতে যেটা রয়েছ এটাই আমাকে এ খবর দিয়েছে। মহিলা তখন
বলল, হ্যাঁ। রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি অসাল্লাম বললেন, কেন তুমি এ কাজ করলে? মহিলা বলল, আমি আপনার ব্যাপারে
ভাবলাম যে, আপনি যদি সত্যিই নবী হয়ে
থাকেন তাহলে এ বিষ আপনাকে কিছুই করতে পারবে না, আর যদি আপনি মিথ্যাবাদী হন তাহলে এ বিষের মাধ্যমে আমরা সবাই আপনার থেকে
মুক্ত হয়ে যাব। রাসূল স. তাকে ক্ষমা করে দিলেন, কোনো শাস্তি দিলেন না। সাহাবীদের মধ্যে যারা তখন খেয়েছিলেন
তারা ইন্তেকাল করেন।
(পরে অবশ্য রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি অসাল্লাম কিসাস্ স্বরুপ উক্ত মহিলাকে শাস্তি দিয়েছিলেন)
(আবু দাউদ শরীফ, হা: নং ৪৫১০, বুখারী শরীফ ও মুসলিম
শরীফেও এ ঘটনার বিবরণ রয়েছে)।
আরো অনেক হাদীস রয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত, মু’জিযা স্বরূপ রাসূল স. এর পক্ষে অদৃশ্যের অনেক বিষয় দেখা এবং বাকশক্তিহীন জিনিসের সাথে কথা বলা বা শোনা সম্ভব ছিল।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর সময়ে
পূববর্তী আসমানী কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলের উপরে পরিপূর্ণ বিশ্বাস যাদের ছিল এবং
যারা এ কিতাবদ্বয়ের বিধান মেনে চলত, এর বাইরে কোনো কিছু
করত না, শিরকও করত না তাদেরকে আহলে
কিতাব বলা হত। তাদের বিশ্বাস ছিল, শেষ নবীর আগমন তাদের
মাঝ থেকে (হযরত ইয়াকুব আ.-এর বংশধর থেকেই) হবে। যেহেতু ঐসময় তারা আল্লাহ্ তায়ালার
নামে পশু যবেহ করত এ কারণে তাদের যবেহকৃত পশু তখন খাওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু
ইসলামের সাথে দুশমনি করতে যেয়ে তারা আর তাদের নিজেদের কিতাবের উপরেও টিকে থাকেনি।
ইচ্ছা করেই তারা তাদের কিতাবের বিধি-বিধান ছেড়ে দিয়েছে এবং বিভিন্নভাবে আল্লাহ্
তায়ালার সাথে শিরক-এ লিপ্ত হয়েছে। ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত, সাহাবায়ে কেরামের যামানা থেকেই তারা আহলে কিতাবের
অন্তর্ভূক্ত হওয়ার শর্ত থেকে বের হয়ে গেছে। ফলে হযরত উমর রা.সহ সাহাবায়ে কেরাম
কথিত আহলে কিতাবদের জবেহকৃত পশু খাওয়া বা তাদের মেয়ে বিবাহ করা হারামের আওতাভূক্ত
বলে মতামত পেশ করেছেন। অতএব বর্তমান সময়ে নামধারী আহলে কিতাবের জবেহকৃত পশু খাওয়ার
বা তাদের কন্যা বিবাহ করার কোনো প্রশ্নই আসে না। এটা সম্পূর্ণ না-জায়েজ।
৪, রোগাক্রান্ত উট ও সুস্থ উট সংক্রান্ত হাদীস
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“রোগাক্রান্ত উট যেন কখনো
সুস্থ উটের সাথে না মেশে।” (বুখারী শরীফ,
হা: নং
৫৭৭১, মুসলিম শরীফ হা: নং ৫৯২২)
উক্ত হাদীসে রোগের সংক্রামক হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
৫, পাত্র ঢেকে রাখাসংক্রান্ত হাদীস
১। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“ঘুমাবার পূর্বে তোমরা অনাবৃত
পাত্রসমূহ ঢেকে রাখবে, মশকের মুখ বন্ধ রাখবে, দরজা বন্ধ করে দেবে এবং বাতিগুলি নির্বাপিত করে দেবে। কেননা
শয়তান মশকের মুখ ছুটাতে পারে না, দরজা খুলতে পারে না
এবং পাত্রের মুখ আলগা করতে পারে না। তোমাদের কেউ যদি পাত্র ঢেকে রাখার জন্য একটি
কাঠি ছাড়া আর কিছু না পায় তবে সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে পাত্রের উপরে ঐ কাঠিটাই
দিয়ে রাখে। আর ইঁদুর গৃহকর্তার গৃহ জ্বালিয়ে দেয়।”(মুসলিম শরীফ, হা: নং ৫৩৬৪)
২। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“তোমরা পাত্রসমূহ ঢেকে রাখ এবং
পানির পাত্রের মুখ বন্ধ করে রাখ। কেননা বৎসরে এমন একটা রাত্র আসে যে রাত্রে
মহামারী (وباء) অবতীর্ণ হয়।
প্রত্যেক অনাবৃত পাত্র ও খোলা মশকের উপর দিয়ে সে মহামারী অতিক্রম করার সময় তাতে
পতিত হয়।”(মুসলিম শরীফ, হা: নং ৫৩৭৪)
উক্ত হাদীসদ্বয়ে রাত্রে খালি পাত্র ও পানির পাত্রের মুখ বন্ধ করে রাখার কথা
বলা হয়েছে। প্রথম হাদীসে শয়তান কর্তৃক ক্ষতির ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে আর দ্বিতীয়
হাদীসে বৎসরের যে কোনো একটা দিন ‘অবা’ তথা মাহামারী অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
উভয় ক্ষতিই খালি পাত্র বা অনাবৃত পানির পাত্রের মধ্যে পতিত হয়ে মানুষের শরীরে আসে।
এগুলো যেহেতু খালি চোখে দেখা যায় না, কাজেই এর সম্পর্ক হয়ত
অণুজীবের সাথে। শয়তানের পক্ষ থেকে যেটা আসে সেটার সম্পর্কও অণুজীবের সাথে। আর
এগুলো যে সংক্রামক হতে পারে তারও ইঙ্গিত উল্লেখিত হাদীসে পাওয়া যায়।
৬, মহামারীতে ধৈর্য ধারণ ও শহীদের সওয়াব অর্জন সংক্রান্ত
অন্যান্য হাদীস
১। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,“প্রত্যেক মুসলমানের জন্য মহামারী হলো শাহাদাত।” (বুখারী
শরীফ- হা: নং ২৮৩০)
২। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“মহামারী হলো এমন এক শাস্তি যা
বনী ইসরাইলের কোনো সম্প্রদায় বা তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরে নাযিল হয়েছিলো। সুতরাং
যে ভূখন্ডে মহামারী আপতিত হয়েছে বলে তোমরা শুনতে পাবে, সেখানে তোমরা গমন করবে না। আর কোনো ভূখন্ডে তা আপতিত হলে
তোমরা যদি সেখানে অবস্থান কর তবে তার থেকে পালিয়ে তোমরা বেরও হবে না।” (বুখারী
শরীফ- হা: নং ৩৪৭৩)
যে ভূখন্ডে মহামারী আপতিত হয় সেখানে বাইরে থেকে গমন করার উপর নিষেধাজ্ঞা
দ্বারা নিজেকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর মহামারী আপতিত ভূখণ্ডে থেকে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দ্বারা ধৈর্য, সবর ও অবিচল থাকতে বলা হয়েছে। এটা ঐ হাদীসের সাথে
সামাঞ্জস্যপূর্ণ যে হাদীসে রাসূলে কারীম স. বলেছেন, (জিহাদের ময়দানে কাতারবদ্ধ হওয়ার পরেও) তোমরা শত্রুদের সাক্ষাৎ কামনা করবে না বরং
আল্লাহ্ তায়ালার নিকটে তোমরা সুস্থতা কামনা করবে। আর যদি শত্রুদের সাথে সাক্ষাৎ ঘটেই যায় তাহলে ধৈর্য্য ও অবিচল থাকবে (পলায়ন করবে না)।
মহামারীর ব্যপারটাও ঠিক তদ্রুপ। (ইমাম তবারী এর বক্তব্যের সারকথা, শরহে বুখারী, ইবনু বাত্তাল থেকে)
৩। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.বলেন,
“আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম।
তিনি আমাকে বললেন,
“মহামারী হলো একটা আযাব, আল্লাহ্ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তাকে এ আযাবে নিপতিত করেন। তবে
আল্লাহ্ তায়ালা মুমিনদের জন্য মহামারীকে রহমত বানিয়ে দিয়েছেন। মহামারী নিপতিত
হওয়ার পর যে (মুমিন) ব্যক্তি ধৈর্য্য ধারণ ও সাওয়াবের আশায় তার নিজ শহরে অবস্থান
করল এবং এ বিশ্বাস রাখলো যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তার
জন্য যা নির্ধারিত রেখেছেন তার বাইরে কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না, তাহলে তার জন্য শহীদের সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে।”
(বুখারী শরীফ, হা: নং ৩৪৭৪)
বুখারী শরীফের উক্ত বর্ণনায় “নিজ শহরে” অবস্থানের কথা আছে। আর মুসনাদে আহমদের
বর্ণনায় “নিজ ঘরে” অবস্থানের কথা রয়েছে। (মুসনাদে আহমদ, হা: নং ২৬২৩৯, সহীহ)
উক্ত হাদীসে একজন শহীদের সমপরিমাণ সওয়াবের কথা বলা হয়েছে তার জন্য, যার মাঝে ৪টি শর্ত পাওয়া যাবে।
এক. ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। হায়-হুতাশ ও পেরেশানির মধ্যে পড়া যাবে না।
দুই. সওয়াবের আশা থাকতে হবে।
তিন. নিজ শহরে বা ঘরে অবস্থান করতে হবে।
চার. এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা যা
নির্ধারিত রেখেছেন তার বাইরে কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না।
এ চারটি শর্ত যথাযথ ভাবে কারো মধ্যে পাওয়া গেলে তার জন্য একজন শহীদের সমপরিমাণ
সওয়াবের কথা বলা হয়েছে, সে ঐ মহামারীতে
মৃত্যুবরণ করুক আর না করুক।
৪। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“প্লেগে আক্রান্ত হয়ে যারা
মারা যান তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে শহীদ ও সাধারণভাবে বিছানায়
মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। শহীদগণ বলেন, প্লেগে মৃত্যুবরণকারী আমাদের ভাই, আমরা যেভাবে নিহত হয়েছি তারাও সেভাবে নিহত হয়েছেন। আপরদিকে
সাধারণভাবে বিছানায় মৃত্যুবরণকারীরা বলেন,
তারা
আমাদের ভাই, আমরা যেভাবে বিছানায়
মৃত্যুবরণ করেছি তারাও সেভাবে বিছানায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের রব (আল্লাহ্
তায়ালা) তখন বলেন, তোমরা প্লেগে
মৃত্যুবরণকারীদের জখমের প্রতি লক্ষ্য কর,
তাদের
জখম যদি নিহত ব্যক্তিদের (শহীদদের) জখমের মত হয় তবে তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।
এমতাবস্থায় দেখা যায় তাদের জখম নিহত ব্যক্তিদের (শহীদদের) জখমেরই মত।”(নাসাঈ
শরীফ-৩১৬৪)
৭. কুষ্ঠ রোগ, কুলক্ষণ ও রোগের সংক্রমণ সম্পর্কিত আরো হাদীস
১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“রোগের সংক্রমণ নেই, কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের প্রতীক নয় ও সফর মাসের কোনো অশুভ নেই। আর কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে
থাক যেভাবে তুমি সিংহ থেকে দূরে থাক।” (বুখারী শরীফ- হা: নং ৫৭০৭)
রোগের সংক্রমণ নেই বলতে উদ্দেশ্য রোগের নিজেস্ব সংক্রমণ ক্ষমতা নেই। বরং রোগ
সৃষ্টি হয় বা রোগ সংক্রামক হয় আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে। আর সংস্পর্শ যেহেতু রোগের
সংক্রমণের কারণ, এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি অসাল্লাম কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
২। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন, “সিংহ থেকে পলয়ন করার ন্যায় তুমি কুষ্ঠ রোগী থেকে পলায়ন কর।”
(সুনানুল বাইহাকী আল কুবরা, হা: নং ১৪৬৩৪)
৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর কর্মপন্থাঃ বনী সাক্বীফের
একদল লোক রাসূলে কারীম স.-এর নিকটে বাইয়াত হতে আসেন। তাদের মধ্যে একজন কুষ্ঠ রোগী
ছিলেন, তিনি দূরে অবস্থান করছিলেন।
রাসূলে কারীম স. তাঁকে বলে পাঠালেন, “আমরা তোমাকে বাইয়াত
করে নিয়েছি। সুতরাং তুমি ফিরে যাও।” (মুসলিম শরীফ হা: নং ২২৩১)
অপরদিকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কুষ্ঠ রোগীর সাথে মোসাফাহা
করেছেন, হযরত আয়েশা রা: কুষ্ঠ রোগিণীর
সাথে খাওয়া দাওয়া করেছেন এবং তাঁর বিছানায় কুষ্ঠ রোগিণী বিশ্রামও করেছে বলে হাদীস
শরীফে এসেছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, রোগ যে সব সময় সংক্রামক
হবেই বিষয়টা তা নয় বরং এটা আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমেই হতে পারে।
ইমাম তবারী র. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি অসাল্লাম-এর উক্ত কাজও ছিল, জাহেলী যুগের যে বদ
আকীদা বিশ্বাস তার খণ্ডনকল্পে (ইবনে বাত্তাল)। এ বিষয়ে “তাহলে হাদীসে ‘সংক্রমণ
নেই’ কেনো বলা হলো” শিরোনামে আলোচনা দেখে এসেছেন।
কুষ্ঠ রোগী থেকে কুষ্ঠ রোগ সংক্রমিত হওয়া একটা সাধারণ ‘কারণ’ (ছাবাব)। কিন্তু
আল্লাহ্ তায়ালার হুকুমে এটা আবার নাও হতে পারে। এটা হলো ঈমান বা বিশ্বাস। কিন্তু
এক্ষেত্রে কর্মপদ্ধতি কেমন হবে তা উক্ত হাদীসসমূহে সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম
যেমন বলে দিয়েছেন তেমনি তিনি করেও দেখিয়েছেন। আর তা হলো, কুষ্ঠ রোগী থেকে সতর্ক থাকা।
৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“রোগ সংক্রমণের নিজস্ব শক্তি
নেই, সফর মাসের মধ্যে কোনো অমঙ্গল
নেই এবং পেঁচায় কোনো অশুভ লক্ষণ নেই।” তখন এক বেদুঈন বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাহলে যে উটগুলি মরুভূমিতে হরিণের ন্যায়
সুস্থ সবল থাকে তাতে একটি চর্মরোগাক্রান্ত উট মিশে সবগুলোকে তো চর্মরোগাক্রান্ত
করে ফেলে? রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি অসাল্লাম তখন বললেন, “তবে প্রথম উটটির মধ্যে কে এ রোগ সংক্রমিত করেছিল?” (বুখারী শরীফ, হা: নং৫৭১৭)
উক্ত হাদীসে রোগের সংক্রমণ হওয়াকে অস্বীকার করা হয়নি, বরং রোগ নিজে নিজে সংক্রমিত হওয়ার যে ধারণা তারা পোষণ করতো
তাকে খণ্ডন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমাদের ধারণামতে রোগ
যদি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় তাহলে বল, প্রথম উটটির মধ্যে কে
এ রোগ সংক্রমিত করেছিল? (মিরকাত)
সংক্রামক রোগের বিষয়ে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. “বযলুল মাউন” (আরবী) নামে
স্বতন্ত্র গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেছেন। সেখানে তিনি পক্ষে বিপক্ষে সবধরনের হাদীস
এনেছেন।
[1] সূরা (২৫) ফুরকান, আয়াত-২ এর অংশঃ “তিনি
সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে”। সূরা (৪) নিসা, আয়াত-৮৫ এর অংশঃ “প্রত্যেক
বিষয় আল্লাহর নিয়ন্ত্রনাধীন”। সূরা (৩৩) আহযাব, আয়াত-৫২ঃ “আল্লাহ্ই প্রত্যেক বিষয়ের সংরক্ষক”। তাফসীরে তবারী, তাফসীরে কাবীর, তাফসীরে বাগাবী, তাফসীরে কুরতুবী, আল বাহরুল মুহীত।
সূরা (১৭) ইসরা, আয়াত ৮৪: “হে নবী আপনি
বলুন, ‘প্রত্যেকেই নিজ নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী
কাজ করে থাকে। সুতরাং তোমাদের রব-ই সম্যক অবগত আছেন, কে সর্বাধিক নির্ভুল পথে আছে।”
[2] জীববিজ্ঞান, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী,
অন্যান্য
ও উইকিপিডিয়া।
[3] Genetically modified organism
[4] এ সম্পর্কে কুরআন পাকে
অসংখ্য আয়াত রয়েছে। এ স্বল্প পরিসরে উল্লেখ না করাই ভালো। তবে কেউ যদি সংক্ষিপ্ত পরিসরে
দেখতে চায়, তবে সূরা নহল, সূরা ইয়াসীন ও সূরা আর রহমান-এর অনুবাদ ও তাফসীর দেখতে পারে।
[5] মধুঃ সূরা (১৬) নহল, আয়াত-৬৮,৬৯: আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, “আপনার রব (প্রতিপালক) মৌমাছিকে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রত্যেক ফল হতে কিছু কিছু আহার
কর,
অতপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ-পদ্ধতি অনুসরণ কর।’ তার উদর হতে
নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়; যাতে রয়েছে মানুষের
শিফা (আরগ্য)। অবশ্যই এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন।”
(মহান আল্লাহ্ সত্য বলেছেন)
কালোজিরাঃ বুখারী শরীফ হা: নং ৫১৫২: উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত
তিনি রাসূলে কারীম স.কে বলতে শুনেছেন,
এই কালো
জিরা ‘সাম’ ব্যাতিত সকল রোগের ঔষধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কি জিনিস? তিনি বললেন, সাম হলো মৃত্যু।
No comments