ইসলামের নামে সন্ত্রাস (পর্ব ২) ইসলামে জিহাদের প্রকৃত মর্ম কি? জিহাদ ও জঙ্গীবাদের মাঝে কোনো পার্থক্য আছে কি?

জিহাদের শাব্দিক অর্থঃ (১) সাধনা, (কৃতকার্যের জন্য বাহ্যিক সাধনা এবং মনুষত্ব অর্জনের জন্য আত্মিক সাধনা উভয়ই শামিল) (২) ন্যয়ের জন্য সংগ্রাম (যুদ্ধ)।

ইসলামে জিহাদের প্রকৃত মর্মকথাঃ

প্রথম মর্ম :

সৃষ্টি ও জন্মগতভাবে মানুষের মধ্যে ভালো ও মন্দ এ দুধরণের কাজের যোগ্যতা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। কঠোর সাধ্য-সাধনার মাধ্যমে লোভ-লালসা, অহংকার-অহমিকা, রিয়া, জিঘাংসা, হিংসা-বিদ্বেশ ইত্যাদি মন্দ গুণ থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা এবং সুস্থ বিবেক, মানবীয় উত্তম চরিত্র, ন্যায়নিষ্ঠতা ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব অর্জন করাকে ইসলামে ‘জিহাদ’ বলে। এর জন্য প্রয়োজন হয় বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ কঠোর সাধনা ও আত্মিক পরিশ্রমের। অন্তর চাইলেই মন্দ কাজ করা যায় না বরং তার বিপরীত মন না চাইলেও ভালো কাজ করতে হয়। তাই প্রবৃত্তির চাহিদার বিপরীত চলা এবং বিবেককে প্রাধান্য দেয়ার এই সাধনাকে ইসলামে ‘জিহাদে আকবর’ (বড় জিহাদ) বলা হয়েছে।

হাদীস শরীফে রাসূলে কারীম স. ইরশাদ করেছেন, 

“সেই প্রকৃত মুজাহিদ, আল্লাহর আনুগত্যে যে তার নিজের নফসের সাথে জিহাদ করে।” (মেশকাত)

عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ : " أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِالْمُؤْمِنِ ؟ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ ، وَالْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ، وَالْمُجَاهِدُ مَنْ جَاهَدَ نَفْسَهُ فِي طَاعَة الله ، وَالْمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ الْخَطَايَا وَالذُّنُوبَ "

ফাদালাহ বিন উবায়েদ হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ স. বিদায় হজ্জ্বে বলেছেন, “আমি কি তোমাদেরকে মু’মিন ব্যক্তি সম্পর্কে সংবাদ দেব না? মু’মিন তো সেই, যার থেকে মানুষেরা জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপদ থাকে। মুসলমান তো সেই, যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলমান নিরাপদে থাকে। মুজাহিদ তো সেই, যে আল্লাহর আনুগত্যের ক্ষেত্রে নিজের নফসের সাথে জিহাদ করে। আর মুহাজির সে, যে অন্যায় অপরাধ ও পাপাচার থেকে হিজরত করে।” (মুসনাদে আহমদ, হাঃ নং ২৩৯৫৮)

দ্বিতীয় মর্ম :

মহান স্রষ্ঠা আল্লাহ তায়ালা মানব জাতীকে সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। পারস্পারিক কায়-কারবার, আদান-প্রদান ও সাহায্য সহযোগিতা ব্যতিত কোনো মানুষ একাকী জীবন ধারণ করতে পারে না। প্রত্যেকেই কারো না কারো প্রতি নির্ভরশীল হতে হয়। এ নির্ভরশীলতা, আদান প্রদান, কায়-কারবার ও সাহায্য সহযোগীতা করার মাঝে যেমন সৃষ্টি হয় হয় মহব্বত, ভলোবাসা, সহমর্মিতা, দায়বদ্ধতা তেমন সৃষ্টি হয় লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেশ, জিঘাংসা ও নিষ্ঠুরতা।

প্রথম অবস্থাকে আমরা শৃংখলা ও দ্বিতীয় অবস্থাকে বিশৃংখলা বলতে পারি। এ বিশৃংখলার একটা পর্যায়ে শুরু হয় অত্যাচার, অবিচার, হত্যা, লুট-পাট ও যুদ্ধ-বিগ্রহ।

শৃংখলার মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি, নিরাপত্তা ও সার্বিক নায্য অধিকার। যাকে আমরা এক বাক্যে ‘মানবাধিকার’ বলতে পারি।

যার যার ধর্ম পালন করা, নিজ নিজ আদর্শ অনুযায়ী চলা, শান্তি ও শৃংখলা বজায় রেখে নিজ ধর্ম ও আদর্শ প্রচার করা, নিরাপত্তার সাথে জীবন ধারণ, বসবাস, চলা-ফেরা, জীবিকা অর্জন করা ইত্যাদি সবই মানবিক অধিকার। অন্যায়ভাবে এসব অধিকারে হস্তক্ষেপ করা, মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে কোনো ব্যক্তি, জাতী, আদর্শ, ধর্ম বা ধর্মপ্রচারকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা, ধর্ম প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা জঘন্য অপরাধ। এগুলো মানবাধিকার লংঘন ও বিশৃংখলার শামিল। বিশৃংখলার বিভিন্ন স্তর রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বিশৃংখলার কোনো পর্যায়কেই পছন্দ করেন না। কুরআন পাকে এসব বিশৃংখলাকে فتنة (ফিতনা) ও فساد (ফাসাদ) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। 

শান্তিপ্রিয় মানুষ কখনো বিশৃংখলা সমর্থন করে না। যারা বিশৃংখলা সৃষ্টি করে তাদেরকে প্রতিহত করার নীতি ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। সর্বযুগে সকল জাতিই বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে বিভিন্ন ভাবে প্রতিহত করেছে। ব্যক্তিগত, সামাজিদ, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে শরীয়ত মোতাবেক প্রতিহত করে শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম হলো ইসলামে ‘জিহাদ’।

বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদেরকে প্রতিহত করতে যেয়ে যেন শান্তিপ্রিয় মুসলমানরা বাড়াবাড়ি না করে, তার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা বিধি-বিধান অবতীর্ণ করেছেন। রাসূলে কারীম স. বিভিন্নভাবে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী সমুন্নত করার প্রচেষ্টাই হলো জিহাদ।

জিহাদ ও জঙ্গিবাদ এক নয়, ইসলাম জঙ্গিবাদ সমর্থন করে না

উল্লেখিত বিশ্লেষণ থেকে জিহাদ ও জঙ্গিবাদের পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে যায়। ‘জঙ্গিবাদ’ হলো শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা আর ‘জিহাদ’ হলো শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা। কাজেই জিহাদ ও জঙ্গিবাদ কখনো এক নয় বরং এ ধরনের জঙ্গিবাদ প্রতিহত করাই ইসলামের অন্যতম আদর্শশেষ নবী ও রাসূর হযরত মুহাম্মাদ (স.)কে প্রেরণ করে মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করে দিয়েছেন-

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ

“(হে নবী!) আপনাকে আমি সারা জাহানের রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।” (আম্বিয়া-১০৭)

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ عَلَى الْمُشْرِكِينَ قَالَ إِنِّى لَمْ أُبْعَثْ لَعَّاناً وَإِنَّمَا بُعِثْتُ رَحْمَةً.

“হযরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূল (স.)কে বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করুন।’ রাসূল (স.) বললেন, ‘আমি অভিসম্পত দানকারী হিসেবে প্রেরিত হই নি। আমি রহমত স্বরূপই প্রেরিত হয়েছি।’” (মুসলিম শরীফ, হা: নং ৬৭৭৮)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

وَإِنَّكَ لَعَلَى خُلُقٍ عَظِيمٍ  

নিশ্চই আপনি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা কলম-৪) 

রাসূল (স.) এরশাদ করেছেন

إِنَّمَا بُعِثْتُ لِأُتَمِّمَ مَكَارِمَ الْأَخْلَاقِ

“নিশ্চয়ই আমি সর্বোৎকৃষ্ট চরিত্রকে পরিপূর্ণ করতেই প্রেরিত হয়েছি।” (বাইহাকী)

যে ব্যক্তি সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হন এবং সর্বোত্তম চরিত্র শিক্ষা দিতে ও পরিপূর্ণ করতে প্রেরীত হন তার অনুসারীরা কখনো সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে না। বরং তারাও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হন এবং সে অনুযায়ী শিক্ষা দেন। অতীত যুগের বিধর্মীদের ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস যার উজ্জল প্রমাণ।

মদীনার সনদঃ শেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (স.) যখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আসেন তখন তাঁর হাতে কাফের মুশরিকদের হত্য করার প্রচুর সুযোগ ছিল। তিনি তা করেন নি। বরং মদীনার সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে তিনি কাফির মুশরিকদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। শুধু তাই নয়, বরং এ সনদের মাধ্যমে মদীনার আশে পাশে বসবাসরত বিভিন্ন দল-উপদল ও গোত্রের মাঝে চলতে থাকা দীর্ঘকালের অন্তঃকলহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের অবসান ঘটে।

বদর যুদ্ধের বন্দীঃ বদর যুদ্ধে হযরত মুহাম্মাদ (স.)-এর চির শত্রু প্রায় ৭০ জন কাফির মুশরিক যোদ্ধা তাঁর হাতে বন্দি হন। তাদেরকে তিনি হত্যা না করে বাচিয়ে রাখার মতামত ও পরামর্শকে গ্রহণ করেন। ফল দাঁড়ায় এই যে, পরবর্তীতে তাদের প্রায় সকলেরই ইসলাম নসীব হয়, তারা সকলে মুসলমান হয়ে যান।

যুদ্ধ বন্দীদের সাথে আচরণঃ হিজরতের পরে হযরত মুহাম্মাদ (স.)-এর জীবদ্বশায় ইসলামের ইতিহাসে প্রায় ৭০টি জিহাদ সংগঠিত হয়েছে। শত শত কাফির মুশরিক যোদ্ধা যুদ্ধবন্দী হিসেবে তাঁর হস্তগত হয়েছে। কিন্তু রহমতের নবী কোনো দিন কোনো যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করেন নি।

মক্কা বিজয়ের দিন চিরশত্রুদের প্রতি দয়াঃ মক্কার কাফির-মুশরিকরা হয়রত মুহাম্মাদ (স.)-এর সাথে কিরূপ দূর্ব্যবহার করেছিল- এটা কারো অজানা নয়। তারা হযরত (স.)কে হত্যা ও ইসলামকে পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। তারা অগনিত মুসলমানের প্রতি অত্যাচার ও হত্যা করেছিল। তাদের অত্যাচারে মুসলমানরা জন্মভূমি ছেড়ে অনত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। হযরত মুহাম্মাদ (স.) স্বয়ং নিজে মাতৃভূমী ছেড়ে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশের সময় সেই সকল কাফির-মুশরিকদেরকে নিজ নিজ ঘরে বা কাবা ঘরে অথবা কুরাইশদের সরদারের ঘরে অবস্থান করার শর্তে তাদের নিরাপত্তার ঘোষণা দিলেন। তারা তাই করল। হযরত মহাম্মাদ স. অতীতের সকল কষ্ট ভুলে তাদেরকে ক্ষমা করলেন, তাদের প্রতি কোনোই অভিযোগ করলেন না। এভাবে বিনা রক্তপাতে মক্কা বিজয় হল।

সন্ত্রাস বনাম ইসলাম

আধুনিক আরবীতে সন্ত্রাসবাদকে ‘ইরহাব’ (ارهاب) বলা হলেও কুরআন পাকে ও হাদীস শরীফে অন্যান্য অর্থের সাথে ‘সন্ত্রাসবাদ’ বোঝাতে ‘ফিতনা’ (فتنة) ও ‘ফাসাদ’ (فساد) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজীতে একে ‘টেরোরিজম’ ও বাংলায় ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলা হয়।

আল্লাহ তায়ালা বিশৃংখলা, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে পছন্দ করেন না। তিনি এগুলোকে মুসলমানদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। পাশাপাশি যারা এসব কাজে লিপ্ত হয় তাদের প্রতি তাঁর কঠিন লা’নত ও অভিশাপের কথা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।

কুরআনপাকে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

وَلَا تفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا إِنَّ رَحْمَةَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِنَ الْمُحْسِنِينَ

“দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তাতে ফাসাদ (বিপর্যয় ও সন্ত্রাস) ঘটাবে না। তাঁকে (আল্লাহকে) ভয় ও আশার সাথে ডাকবে। নিশ্চই আল্লাহ সৎকর্মপরায়নদের নিকটবর্তী।”[আ’রাফ-৫৬]

আল্লাহ তায়ালা যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা হারাম করে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেন,

وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ

“আর যমিনে অশান্তি সৃষ্টিকারী হয়ে বিচরণ করো না।” (বাকারা ৬০)

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ عَلَى مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ () وَإِذَا تَوَلَّى سَعَى فِي الْأَرْضِ لِيُفْسِدَ فِيهَا وَيُهْلِكَ الْحَرْثَ وَالنَّسْلَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الْفَسَادَ

“মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে, পার্থিব জীবনে যার কথাবার্তা আপনাকে চমৎকৃত করবে। আর তার অন্তরে (বিপরীত) যা রয়েছে সে বিষয়ে সে আল্লাহকে স্বাক্ষী রাখে। প্রকৃত পক্ষে সে কঠিন ঝগড়াটে। সে যখন ফিরে যায় তখন সে দুনিয়ায় ফাসাদ(বিশৃংখলা ও সন্ত্রাস) সৃষ্টি, শস্যক্ষেত্র ধ্বংস ও প্রাণনাশ করতে উদ্যত হয়। আল্লাহ ফাসাদ তথা সন্ত্রাস, দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না।” (বাকারা-২০৪-২০৫)

অশান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহ তায়ালার কঠোর ঘোষণা

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,

إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِى الأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلاَفٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الأَرْضِ

“যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং যমীনে বিশৃংখলা করতে সচেষ্ট হয় তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শুলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক হতে কর্তন করা হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এটা হলো তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে রয়েছে কঠোর শাস্তি।” (সূরা মায়িদাহ ৩৩) 

যখন কোনো ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে তখন সে মু’মিন-মুসলমান থাকে না

রাসূলে কারীম স. ইরশাদ করেছেন,

لاَ يَزْنِى الْعَبْدُ حِينَ يَزْنِى وَهْوَ مُؤْمِنٌ ، وَلاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ ، وَلاَ يَشْرَبُ حِينَ يَشْرَبُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ ، وَلاَ يَقْتُلُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ

“বান্দা যখন যিনা করে তখন সে মু’মিন অবস্থায় যিনা করে না, যখন সে চুরি করে তখন সে মু’মিন অবস্থায় চুরি করে না, যখন সে মদ্য পান করে তখন সে মু’মিন অবস্থায় মদ্য পান করে না, আর সে হত্য করে না এমতাবস্থায় যে, সে মু’মিন।” (বুখারী শরীফ)

জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের নির্মূলই হলো ইসলামের জিহাদের মূল লক্ষ্য

সামাজিক জীবনে প্রত্যেকটা মানুষই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। রাসূল (স.) ইরশাদ করেন, “তোমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল। তোমারা তোমাদের সেই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” এই দায়িত্ববোধ সম্পর্কে মানুষদেরকে সজাগ ও সতর্ক করে তোলাই দীনী দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য। দায়ীদের ব্যাপারে আল্লাহ পাক ইরশাদ করছেন,

كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ

“তোমরাই সর্বোৎকৃষ্ট জাতি, তোমাদেরকে বের করা হয়েছে মানুষের কল্যানের জন্য (তা এভাবে যে), তোমরা সৎ কাজের আদেশ  করবে এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে” (সূরা আল ইমরান/১১০)

 যে জাতিকে সর্বোত্তম জাতি বলা হয়েছে এবং মানুষের কল্যানের জন্যই বের করা হয়েছে সে জাতি কখনো সন্ত্রাস সৃষ্টি ও নিরাপরাধ মানুষের উপর হামলা করতে পারে না। বরং তারা সন্ত্রাস দূরীভূত করতে যা যা করার তাই করে। এ কারণে জিহাদ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন,

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ

“তোমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করো যতক্ষন না ফিতনা (সন্ত্রাস) নির্মূল হয় এবং দ্বীন হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য, যদি তারা (সন্ত্রাস থেকে) বিরত হয় তবে অত্যাচারীদের উপর ব্যাতিত তাদের ব্যাপারে কোনো বৈরিতা নেই।” (বাকারা-১৯৩)

আরো স্পষ্টভাষায় আল্লাহ তায়ালা বলেন,

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا

“লড়াইকারীদেরকে লাড়াইয়ের অনুমতি এ জন্যে দেয়া হয়েছে যে, তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে।” (হজ্জ্ব-৩৯)

জুলুম এক ধরনের সন্ত্রাস। এ আয়াতে জালেমদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলা হয়েছে।

এসব আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, সন্ত্রাস নির্মূলই জিহাদের মূল লক্ষ্য।


No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.